আজ ২৮শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বালু ভরাটে চাদাঁবাজি বন্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দলোনের আল্টিমেটাম

নরসিংদীতে সদর উপজেলার চরাঞ্চল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উত্তোলনকৃত বালু দিয়ে কৃষি ভরাট করে উল্টো কৃষকদের কাছে থেকে চাঁদা আদায় করছে বালু খেকো একটি চক্র। তাদের এ অনিয়ম বন্ধে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দলোনের কর্মী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যারা।

রবিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর ) বিকাল ৩ টার দিকে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় কৃষকদের হয়ারানি বন্ধসহ ৬ দফা দাবি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপির বিষয়টি নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিমুল হক নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসন ছাড়াও পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীর কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হত।

শিক্ষার্থীরা বলছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামে–সাতপাড়া, বীরগাও, বাখরনগর, খোদাদিলা, নদী খনন প্রকল্পের বালু দিয়ে প্রায় ৪ হাজার শতাংশ কৃষি জমি ভরাট করে স্তুপাকারে রাখা হয়েছে। কৃষকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কৃষি জমি ভরাট করা হয়েছে। ফলে, কৃষি জমির ঘাটতিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি পর প্রতিটি গ্রামের কিছু বালুখেকো প্রতি শতাংশের বিপরীতে কৃষকদের কাছে থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে উল্টো কৃষকরা টাকা পয়সা না দিলে তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে।

তাদের দাবিগুলো হলো বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উত্তেলনকৃত বালু সমূহ স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট উন্নয়নে ব্যবহার নিশ্চিত করা, উত্তেলনকৃত বালুকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, কৃষকদের কৃষি জমি ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, মাদক নির্মূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিভিন্ন সরকারী অফিসে সেবা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

আলোকবালী ইউনিয়ন ব্লাড ডোনার ক্লাবের সভাপতি ও নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন বলেন, “বালু উত্তেলনে চাঁদাবাজি বন্ধ, মাদক নির্মূল, রাজনৈতিক হয়রানি ও মিথ্যা মামলা, শুষ্ক মৌষমে নৌকা চলাচলে নদীতে অবৈধ কচুরিপানার ঘের সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এলাকা। আমাদের সমস্যা গুলো দীর্ঘদিনের। তাই চাই এসব বিষয়ে সমস্যা গুলোর যৌক্তিক সমাধান।”

নরসিংদী সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ ইসলাম বলেন, “বৈষম্য বিরোধী আন্দলোনে অংশ গ্রহণে আহত হয়েছি এবং জীবন উৎসর্গ প্রস্তুত ছিলাম দেশের মানুষদের অন্যায় ও অত্যাচার থেকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও মনে হচ্ছে আরেক স্বৈরাচার ঘারে চেপে বসেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কৃষকের জমি ভরাট করে ফসলি জমি নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। উল্টো কৃষকদের জমিমানা দেওয়ার কথা বলছে ওই বালুখেকোরা। কৃষকদেরকে প্রতি শতাংশ জমির বিপরীতে ১৫-২০ হাজার টাকা প্রদানে বাধ্য করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “কৃষকরা দেশের উৎপাদন করে সবাইকে আহারের ব্যবস্থা করে। কৃষি জমিতে বালু ভরাট করা আইনগতভাবে অপরাধ। অথচ এ অপরাধ করেও তারা বীরদর্পে দেশে অরাজকতা ও ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এসব অন্যায়সহ এলাকায় চাদাঁবাজি বন্ধ না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। দরকার হলে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি।”

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান বলেন, “শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ দিয়েছি, সেগুলোর সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে ৬ টি দফার যে গুলো পুলিশের অন্তর্ভুক্ত, সেগুলো আমরা দেখবো, আমরা তাদের দাবির বিষয়ে আন্তরিক।”

নরসিংদী জেলা প্রশাসক রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীরা যে দাবি গুলো জানিয়েছেন, সে গুলোর বিষয়ে আমরা কিছুটা অবগত আছে। অবৈধ বালু উত্তেলন করে কৃষকের জমি ভরাট করে ফসলি জমি ভরাট আইনগত অপরাধ। এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাদের দাবি গুলো আমরা নোট নিয়েছি।”

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ